সম্পূর্ণ বাংলায় হনুমান
চালিশা মন্ত্র পাঠ, সৃষ্টি,
তাৎপর্য এবং উপকারিতা :
( Hanuman Chalisa
Mantra Path,
Significance and
Benefits in Full
Bengali ) :
এই হনুমান চালিশা মন্ত্রটিতে হনুমানের আরাধনা, মহাত্ম্য এবং কৃপাময় স্বভাব বর্ণনা করা হয়েছে ।তাই এই ব্লগে সম্পূর্ণ বাংলায় হনুমান চালিশা মন্ত্র পাঠ, তাৎপর্য এবং তার উপকারিতা বর্ণনা করলাম । এটি আপনাদের মত হনুমান ভক্তদের জীবনের সমস্যার সমাধান, কষ্টের পরিহার, রোগের নিরাময় এবং শান্তি-সুখের জন্য প্রয়োজনীয় মন্ত্র। হয়তো বা এই হনুমান চালিশা পাঠ করা হলে হনুমান ভক্তদের মধ্যে একটি শক্তিশালী ভাব জাগ্রত হয়।
সম্পূর্ণ বাংলায় হনুমান চালিশা মন্ত্র :
হনুমান চালিশা মন্ত্রটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং উৎকর্ষময়। তাই সম্পূর্ণ বাংলায় হনুমান চল্লিশা মন্ত্রটি নীচে বিস্তারিতভাবে অর্থসহ বর্ণনা করলাম। যেহেতু বাংলা ভাষায় লেখা এই মন্ত্রটি খুব কম পাওয়া যায়। তাই বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের জন্য আমি এই ব্লগটি লিখলাম। এই মন্ত্রটি আমাদেরকে অপরিসীম মানসিক যন্ত্রণা, ভয় এবং কষ্ট থেকে মুক্তির উপায় সরবরাহ করে। এই শক্তিশালী মন্ত্রটি আমাদেরকে আধ্যাত্মিক এবং মানসিক বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
ভগবান হনুমানের প্রশংসায় ভরা ৪০ টি শ্লোক নিয়ে হনুমান চালিশা মন্ত্র গঠিত। হনুমান চালিশা অবধিতে রচিত।
সম্পূর্ণ বাংলায় হনুমান চল্লিশা মন্ত্রটি :
দোহা
শ্রী গুরু চরণ সরোজ রজ, নিজ মন মুকরু সুধারী।
বরনৌঁ রঘুবর বিমল যশ, জো দায়াকু ফল চারি৷
অর্থ :
আমার গুরুর পাদ পদ্মের ধুলো দিয়ে আমার হৃদয়ের আয়না পরিষ্কার করে, আমি রঘুকুল রাজবংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজার ঐশ্বরিক কীর্তি পাঠ করি। যিনি আমাদের চারটি প্রচেষ্টার ফল দিয়েছিলেন।
বুদ্ধহীন তনু জানিকৈ, সুমিরৌ পবন-কুমার।
বাল বুদ্ধি বিদ্যা দেহু মোহি, হরহু কলেশ বিকার।
অর্থ :
আমার কম বুদ্ধি আছে তাই আমি 'পবন পুত্র'কে স্মরণ করি। যিনি আমাকে শক্তি, প্রজ্ঞা এবং সমস্ত ধরণের জ্ঞান দান করে। আমার সমস্ত দুঃখ এবং ত্রুটিগুলি দূর করেন।
চৌপাঈ
জয় হনুমান জ্ঞান গুন সাগর।
জয় কপীশ তিহুঁ লোক উজাগর৷। ১।।
রামদূত অতুলিত বলধামা।
অঞ্জনী-পুত্র পবনসুত নামা।। ২।।
অর্থ :
জ্ঞান ও গুণের সাগর ভগবান হনুমানের জয় হোক। বানরদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, তিন জগতের আলোকিত প্রভুর জয়।
আপনি ভগবান রামের দূত, অতুলনীয় শক্তির আবাস, মা অঞ্জনির পুত্র, এবং পবনের পুত্র হিসাবেও জনপ্রিয়।
মহাবীর বিক্রম বজরঙ্গী।
কুমতি নিবার সুমতি কে সংগী।। ৩।।
কাঞ্চন বরণ বিরাজ সুবেসা।
কানন কুণ্ডল কুঞ্চিত কেশা।।৪।।
অর্থ :
মহান বীর তুমি বজ্রপাতের মত পরাক্রমশালী। তুমি মন্দ বুদ্ধি দূর কর এবং যারা ভালো যারা সৎ তুমি তাদের সঙ্গী।
তোমার গায়ের রং সোনালী এবং তুমি সুন্দর পোশাকে শোভিত। তোমার কানে শোভাময় কানের দুল আছে এবং তোমার চুল কোঁকড়া ও ঘন।
অবশ্যই পড়ুন - ভারতের সভ্যতা অষ্টাদশ পুরাণ
হাত ব্রজ অউ ধ্বজা বিরাজে।
কান্ধে মুঞ্জ জেনেউ সাজে।। ৫।।
শঙ্কর সুবন কেশরিনন্দন।
তেজ প্রতাপ মহা জগ বন্দন।।৬।।
অর্থ :
তোমার হাতে গদা ও ন্যায়ের পতাকা জ্বলুক। একটি পবিত্র সুতো আপনার ডান কাঁধে শোভা পায়।
তুমি ভগবান শিবের মূর্ত রূপ এবং বনর-রাজ কেশরী পুত্র। তোমার মহিমার কোন সীমা বা শেষ নেই। সমগ্র বিশ্ব তোমার পূজা করে।
বিদ্যাবান গুণী অতি চতুর৷
রাম কাজ করিবে কো আতুর।। ৭।।
প্রভু চরিত্র শুনিবে কো রসিয়া৷
রাম লখন সীতা মন বসিয়া৷। ৮।।
অর্থ :
আপনি জ্ঞানীদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী,গুণী এবং চতুর। আপনি সর্বদা ভগবান রামের কাজ করতে আগ্রহী।
আপনি ভগবান রামের কাজ এবং আচরণ শুনে অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করেন। ভগবান রাম, মাতা সীতা এবং ভগবান লক্ষ্মণ চিরকাল আপনার হৃদয়ে বাস করুন।
সুক্ষ্ম রূপ ধরি সিয়হিন দিখাবা৷
বিকট রূপ ধরি লঙ্কা জরাবা৷। ৯।।
ভীম রূপ ধরি অসুর সংহারে।
রামচন্দ্রং কাজ সংবারে।। ১০।।
অর্থ :
সূক্ষ্ম রূপ ধারণ করে তুমি মা সীতার সামনে হাজির হয়েছ। এবং ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে আপনি লঙ্কা পোড়ালেন।
ভীমের মত তুমি বিশাল রূপ ধারণ করে রাক্ষসদের বধ করেছ। এইভাবে আপনি ভগবান রামের কাজগুলি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন।
লায়ে সঞ্জীবন লাখনা জিয়ায়ে।
শ্রী রঘুবীর হরশি উর লায়ে।। ১১।।
রঘুপতি কীন্হি বহুত বাদাই৷
তুম মম প্রিয়া, ভরতহি সম ভাই।। ১২।।
অর্থ :
জাদু-ভেষজ সঞ্জীবনী নিয়ে এসে আপনি ভগবান লক্ষ্মণকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।
রঘুপতি ভগবান রাম আপনার প্রচুর প্রশংসা করলেন ও বললেন যে আপনিও তাঁর কাছে ভরতের মতো প্রিয় ভাই।
সহস দেহ তুমহারো যশ গাবে।
অব কহি শ্রীপতি কন্ঠ লাগাবে৷। ১৩।।
সনকাদিক ব্রহ্মাদি মুনিশা।
নারদ সারদ সহিত আহিসা।। ১৪।।
অর্থ :
এই বলে ভগবান রাম তোমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আলিঙ্গন করলেন। সনকের মতো ঋষি, ব্রহ্মার মতো দেবতা এবং নারদের মতো ঋষিরা এমনকি হাজার মুখের সর্পও আপনার কীর্তি গায়।
সনক, সানন্দন এবং অন্যান্য ঋষি এবং মহান সাধুগণ ব্রহ্মা - দেবতা, নারদ, সরস্বতী - মাতা দিব্য এবং সর্পদের রাজা আপনার মহিমা গায়।
যম কুবের দিগপাল জাহান তে।
কবি কোবিদ কহি সাকে কহঁ তে।। ১৫।।
তুম উপকার সুগ্রীবহি কীনহা৷
রাম মিলায়ে রাজ-পদ দেনহা।। ১৬।।
অর্থ :
যম, কুবের ও চতুর্ভুজের রক্ষক; কবি-পণ্ডিত-কেউ তোমার মহিমা প্রকাশ করতে পারে না।
আপনি সুগ্রীবকে ভগবান রামের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে এবং তার মুকুট পুনরুদ্ধার করে সাহায্য করেছিলেন। অতএব আপনি তাকে বাদশাহ (রাজা বলার মর্যাদা) দিয়েছেন।
তুমহারো মন্ত্র বিভীষণ মানা।
লঙ্কেশ্বর ভয়ে সব জগ জানা৷। ১৭।।
যুগ সহস্ত্র যোজন পর ভানু।
লীলাউ তাহি মধুর ফল জানু৷। ১৮।।
অর্থ :
একইভাবে আপনার উপদেশ মেনে বিভীষণ লঙ্কার রাজা হয়েছিলেন।
হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত সূর্যকে একটি মিষ্টি লাল ফল বলে ভুল করে আপনি গ্রাস করেছেন।
প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মাহি৷
জলধি লন্ধি গয়ে অচরজ নাহি৷। ১৯।।
দুর্গম কাজ জগত কে জেতে।
সুগম অনুগ্রহ তুমারে তেতে।। ২০।।
অর্থ :
আপনাকে ভগবান রাম যে আংটিটি দিয়েছিলেন সেটি আপনি মুখে রেখে আপনি বিস্মিত না হয়ে সাগর পাড়ি দিয়েছিলেন।
তোমার কৃপায় দুনিয়ার সব কঠিন কাজ সহজ হয়ে যায়।
রাম দুয়ারে তুম রাখভারে।
হট না আজ্ঞা বিনু পসারে।। ২১।।
সব সুখ লাহে তুমহারি সরণা।
তুম রক্ষক কহু কো ডর না।। ২২।।
অর্থ :
তুমি ভগবান রামের দ্বারে দারি। আপনার অনুমতি ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারে না। যার অর্থ হল ভগবান রামের দর্শন পেতে হলে শুধুমাত্র আপনার আশীর্বাদেই সম্ভব।
যারা তোমার শরণাপন্ন হয়, তারা সকল আরাম ও সুখ পায়। যখন আপনার মতো আমাদের একজন রক্ষক থাকে তখন আমাদের কাউকে বা কিছুতে ভয় পাওয়ার দরকার নেই।
আপন তেজ সমহারো আপে।
তিনো লোক হ্যাঙ্ক তে কাঁপে।। ২৩।।
ভূত পিশাচ নিকট নাহি আবে।
মহাবীর যব নাম সুনাবে।। ২৪।।
অর্থ :
আপনি একা আপনার মহিমা প্রতিরোধ করতে পারেন। তোমার এক গর্জনে তিন জগৎ কাঁপতে থাকে।
হে মহাবীর যারা আপনার নাম স্মরণ করে তাদের কাছে কোন ভূত বা অশুভ আত্মা আসে না।
নাসে রোগ হরে সব পিরা।
জপত নিরন্তর হনুমত বীরা।। ২৫।।
সংকট তে হনুমান ছুড়াবে।
মন ক্রম বচন ধ্যান জো লাভে।। ২৬।।
অর্থ :
হে হনুমান আপনার নাম পাঠ করলে বা জপ করলে সকল রোগ ও সকল প্রকার যন্ত্রণা দূর হয়। অতএব নিয়মিত আপনার নাম জপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
যে ব্যক্তি চিন্তা, বচন ও কর্ম দ্বারা আপনার ধ্যান বা পূজা করে সে সকল প্রকার সংকট ও দুর্দশা থেকে মুক্তি লাভ করে।
সব পর রাম তপস্বী রাজা।
তিনোকে কাজ সকল তুম সাজা।। ২৭।।
অউর মনোরথ জো কোই লাভে।
সোই অমিত জীবন ফল পাবে।। ২৮।।
অর্থ :
ভগবান রাম সমস্ত রাজাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ তপস্বী। কিন্তু ভগবান শ্রী রামের সমস্ত কাজ একমাত্র আপনিই করেছেন।
যে কোন আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আপনার কাছে যে আসে সে প্রকাশিত ফলের প্রাচুর্য লাভ করে যা সারা জীবন থাকে।
চারোঁ যুগ প্রতাপ তুমহারা।
হ্যায় পরসিধ জগৎ উজিয়ারা।। ২৯।।
সাধু-সন্ত কে তুম রাখবারে।
অসুর নিকন্দন রাম দুলারে।। ৩০।।
অর্থ :
তোমার শক্তি চার যুগ ভরে। এবং তোমার মহিমা সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ।
আপনি সাধু-ঋষিদের অভিভাবক। রাক্ষসদের ধ্বংসকারী এবং ভগবান রামের আরাধ্য।
অষ্ট সিদ্ধি নৈ নিধি কে দাতা।
বর দীন জানকী মাতা।। ৩১।।
রাম রসায়ন তুমহারে পাসা।
সদা রাহো রঘুপতি কে দাসা।। ৩২।।
অর্থ :
আপনি যোগ্যদের বর দেওয়ার জন্য মা জানকির আশীর্বাদ পেয়েছেন। আপনি অষ্ট সিদ্ধি এবং ন্যায় নীতি প্রদান করতে পারেন।
তোমার মধ্যে রামভক্তির সার আছে।তুমি সর্বদা রঘুপতির একনিষ্ঠ সেবক হয়ে থাকো।
তুমহারে ভজন রাম কো পাবে।
জনম জনম কে দুঃখ বিসরাবে।। ৩৩।।
অন্তকাল রঘুবর পুর জায়ি।
জনম জনম হরি-ভকত কহয়ি৷। ৩৪।।
অর্থ :
যখন কেউ আপনার প্রশংসা, আপনার নাম গায়, তখন সে ভগবান রামের দেখা পায় এবং বহু জীবনের দুঃখ থেকে মুক্তি পায়।
আপনার কৃপায় কেউ মৃত্যুর পরে ভগবান রামের অমর আবাসে যাবে এবং তাঁর প্রতি নিবেদিত থাকবে।
অর দেবতা চিত্ত ন ধরই।
হনুমত সেয়ে সর্ব সুখ করই৷। ৩৫।।
সংকট কাটে মিতে সব পিরা।
জো সুমিরে হনুমত বলবীরা৷। ৩৬।।
অর্থ :
অন্য কোন দেবতা বা ঈশ্বরের সেবা করার প্রয়োজন নেই। ভগবান হনুমানের সেবা সব সুখ দেয়।
যিনি শক্তিমান প্রভু হনুমানকে স্মরণ করেন তার সমস্ত কষ্টের অবসান হয় এবং তার সমস্ত যন্ত্রণাও শেষ হয়ে যায়।
জয় জয় জয় হনুমান গোঁসাইন।
কৃপা করহু গুরুদেব কি নাই৷। ৩৭।।
জো শত বার পাঠ কর কোই।
ছুটহি বন্দি মহা সুখ হোয়ি৷। ৩৮।।
অর্থ :
হে ভগবান হনুমান পরাক্রমশালী প্রভু, দয়া করে আমাদের পরম গুরু হিসাবে আপনার অনুগ্রহ দান করুন।
যে ব্যক্তি এই চালিসা একশত বার পাঠ করবে সে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্তি পাবে এবং পরম সুখ লাভ করবে।
জো ইয়ে পড়ে হনুমান চালিসা।
হোয়ে সিদ্ধি সাখি গৌরীসা।। ৩৯।।
তুলসীদাস সদা হরি চেরা।
কিজিয়ে নাথ হৃদয় মাহ ডেরা।। ৪০।।
অর্থ :
যিনি এই হনুমান চালিসা পাঠ করেন তার সমস্ত কাজ সিদ্ধ হয়। ভগবান শিব স্বয়ং এর সাক্ষী।
তুলসীদাস বলেন- হে ভগবান হনুমান আমি যেন সর্বদা ভগবান শ্রী রামের একজন সেবক হয়ে থাকি। এবং আপনি সর্বদা আমার হৃদয়ে বাস করুন।
দোহা
পবন তনয় সংকট হরণ মঙ্গল মূর্তি রূপ।
রাম লখন সীতা সহিত হৃদয় বসহু সুর ভূপ।।
অর্থ :
হে বায়ুপুত্র তুমি সকল দুঃখের বিনাশকারী।
আপনি ভাগ্য এবং সমৃদ্ধির মূর্ত প্রতীক।
ভগবান রাম লক্ষ্মণ এবং মাতা সীতার সাথে আমার হৃদয়ে সর্বদা বাস করুন।
হনুমান চালিসা মন্ত্রটির সৃষ্টির রহস্য :
তুলসী দাস গোকুলে শ্রী রাম ও লক্ষ্মণের দর্শন পান।তুলসী দাস ভগবান রামের দর্শন পেয়েছিলেন এটা শোনার পর একবার তুলসীদাসকে সম্রাট আকবর তার রাজ দরবারে ডেকেছিলেন। আকবর শ্রী রামের অস্তিত্বের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন এবং তিনি তুলসীদাসকে শ্রী রামচন্দ্রকে দেখাতে বলেন। তখন তুলসীদাস উত্তর দিয়েছিলেন যে শ্রীরাম কেবল তাঁর ভক্তদের দর্শন দেন। তখন সম্রাট আকবর তুলসী দাস কে কারাগারে বন্দী করেছিলেন। সেই সময় কারাগারে থাকাকালীন তুলসীদাস হনুমানের প্রশংসায় হনুমান চালিসা লিখেছিলেন। হনুমান চালিশার মধ্যে ৪০টি শ্লোক রয়েছে। ৪০ মানে চালিস তাই এই কবিতাটি হনুমান চালিসা নামে পরিচিত হল। হনুমান চালিসা শেষ করার পর আকবরের শহরে এক আজব ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় একদল বানর বাহিনী সম্রাট আকবর শহরে আক্রমণ করেছিল। আকবরের পুরো সৈন বাহিনী শত চেষ্টা করেও বানরদের দুষ্টুমি বন্ধ করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞ মন্ত্রীদের পরামর্শে আকবর তুলসীদাসকে ছেড়ে দেন এবং হঠাৎ বানররা ঝামেলা বন্ধ করে দেয়। এবং শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
'রামচরিতমানস' রচয়িতা সাধক গোস্বামী তুলসীদাস হনুমান চালিসা রচনা করেন।
হনুমান চালিশা পাঠের তাৎপর্য :
হনুমান চালিশা হল ভারতীয় হিন্দু ধর্মের একটি প্রমুখ মন্ত্র। এটি হনুমান ভক্তদের দ্বারা পাঠ করা হয়। এটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা এবং অনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করা হয়। হনুমান চালিশাকে তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে।
১. শ্রী গণেশায় নমঃ (Sri Ganeshaya Namaha) -
এটি হিন্দু দেবতা গণেশের মন্ত্র। এই মন্ত্রটি গণেশের কাছে প্রার্থনা করা হয়। এই মন্ত্র পাঠ করলে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
২. শ্রী হনুমান চালিশা দোহা (Sri Hanuman Chalisa Doha) -
এই অংশে একাধিক বিষয় চিত্রিত হয়েছে। এই অংশে বর্ণিত হয়েছে হনুমানের মহাত্ম্য, পালনকারী গুণ, শক্তি, এবং মন্ত্রের মাধ্যমে হনুমানের আশীর্বাদ প্রাপ্তির উপায়।
৩. চালিশা কেশরি নন্দন (Chalisa Kesari Nandan) -
এই অংশে হনুমানের বিভিন্ন নাম ও বিভিন্ন লীলাবিচার বর্ণিত হয়েছে । এই অংশটি মন্ত্রটির সকল গুণ এবং আদর্শকে সম্মান করে।
এই হনুমান চালিশা মন্ত্রটিতে হনুমানের আরাধনা, মহাত্ম্য এবং কৃপাময় স্বভাব বর্ণনা করা হয়েছে । এটি হনুমান ভক্তদের জীবনের সমস্যার সমাধান, কষ্টের পরিহার, রোগের নিরাময় এবং শান্তি-সুখের জন্য প্রয়োজনীয় মন্ত্র। হয়তো বা এই হনুমান চালিশা পাঠ করা হলে হনুমান ভক্তদের মধ্যে একটি শক্তিশালী ভাব জাগ্রত হয়।
হনুমান চালিসা পাঠের উপকারিতা :
১. হনুমান চালিশা হল হিন্দু ধর্মীয় তথা হনুমান ভক্তদের কাছে শক্তি, বিশ্বাস এবং মহৎ উদ্দেশ্যের প্রতীক।
হনুমান চালিশা পাঠের ফলে ভক্তরা ভীতি, কষ্ট এবং বিপদ থেকে মুক্তি এবং সুখ অর্জন করতে পারেন। হনুমান একজন প্রকৃত ভক্তের শক্তি, আত্মবিশ্বাস এবং মহৎ উদ্দেশ্য বৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে ধরা হয়।
২. হনুমান চালিশার মাধ্যমে যাঁর চরণ সেবা করা হয়, তিনি তাদের সহায় হন। যে ব্যাক্তি ভগবান শ্রীরামের পরম ভক্ত তার উদ্ধারের জন্য হনুমান প্রধান অবতার হিসাবে অবতীর্ণ হন।
৩. হনুমান চালিশার পাঠ করার মাধ্যমে ব্যাক্তি উদ্ধার এবং আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারেন। এটি আমাদের জড় প্রকৃতির মনকে পরিবর্তন করে। যা আমাদেরকে একটি সফল এবং উদ্দেশ্যমূলক জীবন প্রদান করে।
৪. হনুমান চালিশা বাণীটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং উৎকর্ষময় যেটি আমাদেরকে অপরিসীম মানসিক ভয় এবং কষ্ট থেকে মুক্তির উপায় সরবরাহ করে।
এটি মন্ত্রটি আমাদেরকে আধ্যাত্মিক এবং মানসিক বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
৫. হনুমান চালিশা পাঠের মাধ্যমে আমরা হনুমানের আবেগ, পরিশ্রম এবং উদ্দেশ্য সাধনের মতো ক্রিয়াশীল হতে পারি। এটি হনুমানের প্রাকৃতিক গুণগত বৈশিষ্ট্য ও অদ্ভুত শক্তিশালী ব্যক্তিত্বকে আমাদের মাঝেও সক্রিয় করে তুলতে পারে।
সুতরাং হনুমান চালিশা পাঠটি আমাদের জীবনে অদ্ভুত পরিবর্তন এবং উন্নতির পথ প্রদান করতে পারে । হনুমান চালিশা একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় পাঠ যা হনুমানের প্রতি অনুগ্রহ, বিশ্বাস এবং উন্নতির উদ্দেশ্যে পড়া হয়।
ধন্যবাদ
0 মন্তব্যসমূহ